চেক লেখার নিয়ম এবং নির্ভুলভাবে সঠিক প্রক্রিয়া ব্যাংকের চেক লিখুন।
চেক লেখার নিয়ম এবং নির্ভুলভাবে সঠিক প্রক্রিয়া ব্যাংকের চেক লিখুন: আসসালামু আলাইকুম পাঠক বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলে সবাইকে জানাচ্ছি স্বাগতম। আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা কিনা ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম মেনে পরিপূর্ণ একটি ব্যাংক চেক লিখতে চান। কিন্তু এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা এবং সঠিক নিয়ম না জানার কারণে বিভিন্ন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হন।
আর ঠিক তাই নানা সময়ে চেক বুক এর পৃষ্ঠা নষ্ট হতে হয়। তাই আপনারা যারা চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল। তাই চলুন জেনে নেই চেকবুক কি? চেক লেখার নিয়ম কি এবং এর সঠিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
চেক কি চেকবুক কি
চেক হলো একটি আর্থিক নথি যাকে আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ নথিও বলতে পারেন।। একটি ব্যাংককে একজন ব্যক্তির একাউন্ট থেকে অন্য ব্যক্তির নিকট বা অন্য কোন কোম্পানির একাউন্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্ধ প্রদানের জন্য যে নথিপত্র দেওয়া হয় সেটাই হচ্ছে চেক। এটি যেকোন ব্যক্তি সংস্থা এবং সরকার বিভিন্ন ফান্ড অর্থের লেনদেনের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
যদিও বা এই সময়ে ফান্ড স্থানান্তরের ইলেকট্রনিক পদ্ধতি গুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কিন্তু তবুও চেক লেনদেন এখনো এই দেশের ব্যবসা গুলোর মধ্যে অর্থ লেনদেনের একটা নিরাপদ মাধ্যমিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
চেক বলতে কী বোঝায়
Cheque/চেক মানে নথিপত্র। মূলত অর্থ লেনদেনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম কে বলা হয়ে থাকে চেক। অত্যন্ত সুবিধা জনক এবং নিরাপদ এই মাধ্যমটি অবলম্বন করে খুব সহজেই প্রতারণার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। আর তাছাড়াও ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলন কিংবা স্থানান্তরের জন্য অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। সেই সব মাধ্যম গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চেক।
আর এটিকে ব্যাংক লেনদেনের প্রধানতম এবং আদি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হয়তো জেনে থাকবেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে জমা টাকা উত্তোলনের জন্য একটি চেকের নির্দিষ্ট কিছু তথ্য পূরণ করে এড়পর জমা দিতে হয়। আর এটা পূরণ না করা পর্যন্ত কোনভাবেই অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ অর্থ লেনদেন সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই চেক বলতে বোঝায় সেই জনপ্রিয় মাধ্যমকে, যে মাধ্যমে খুব সহজেই অর্থ আদান-প্রদান করা যায়।
আর যেহেতু চেক নিরাপদ ও সুবিধাজনক মাধ্যম তাই অবশ্যই আমাদের জানা প্রয়োজন এটি কিভাবে লিখতে হয় এবং কোন প্রক্রিয়ায় লিখলে সব থেকে ভালো হয়। তাহলে চলুন আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জেনে নেই চেক লেখার নিয়ম। নিজের নামে চেক কিভাবে লিখবেন এবং ক্রস চেক লেখার সঠিক নিয়ম ও আরও বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে।
চেক কত প্রকার ও কি কি
চেকের প্রকারভেদ অনির্দিষ্ট। একেক দেশে একেকরকম চেকের প্রচলন রয়েছে আর আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকার চেক ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে
- অর্ডার চেক
- ক্রসড চেক
- সেলফ চেক
- ওপেন চেক
- স্টেল চেক
- ব্যাংকার্স চেক
- বহনকারী চেক
- ট্রাভেলার্স চেক
চেক লেখার নিয়ম সঠিকভাবে চেক লেখার নিয়ম
ইতিমধ্যে আমরা চেকের প্রকাশ সম্পর্কে জেনেছি। আর বিভিন্ন প্রকারের চেকের প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশে মূলত সব ধরনের চেক প্রায় একই পদ্ধতিতে লেখা হয়ে থাকে। তাই চলুন কিভাবে একটি চেক লিখতে হয় এবং চেক লেখার ক্ষেত্রে করণীয় ও অকরণীয় দিকগুলো কি কি সেসব সম্পর্কে জেনে নেই।
করণীয় দিক
চেক লেখার সময় চেকের বাঁ দিকের উপরের অংশে দুটি সমান্তরাল রেখা টেনে দিতে হবে। আর এটা যেকোন চেকের শুরুতেই করতে হবে। Date বক্সে “নেম অফ দা পে” তে গ্রাহকের নাম এবং টাকার পরিমান একবার সংখ্যায় এবং আরেকবার কথায় লিখতে হবে। অবশ্যই ডেট বক্সে “নেম অফ দা পে” লেখার সময় অ্যামাউন্টের শেষে(/) চিহ্নটি দিতে হবে। সেই সাথে সিগনেচার এর জায়গায় নিজের ব্যাংক স্বীকৃত স্বাক্ষর করতে হবে।
অকরণীয় দিক
চেকের উপর কোন রকমের কাটাকুটি করা যাবে না। অ্যামাউন্ট এর সংখ্যা ও শব্দের মধ্যে বেশি শূন্যস্থান রাখা যাবে না। অবশ্যই প্রতিটি কলাম পূরণ করতে হবে। মানে চেকের কোন কলাম খালি রাখা যাবে না। চেকে কখনো পিন মারা যাবে না এবং ছেঁড়া যাবে না।
তো পাঠক বন্ধুরা, এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা করণীয় ও অকরণীয় দিক সম্পর্কে জানলাম। যেহেতু ব্যাংক চেক ব্যবহার করে অর্থ উত্তোলন বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের জন্য অবশ্যই একটি চেক বই থাকতে হয়, তাই এই চেক বই সংগ্রহের জন্য ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সময় আবেদন করাটা জরুরী। এবার চলুন জেনে নেই সঠিকভাবে চেক লেখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
প্রথমত: আপনি চেক অর্থাৎ নথিপত্র হাতে নিলে চেকের উপরের ডান দিকে ডেট নামের একটি অপশন বক্স দেখতে পাবেন। তারিখের জন্য সেখানের প্রথম দুটি বক্স সপ্তাহ, পরবর্তী দুটি বক্স মাসের জন্য এবং শেষ চারটি বক্স বছরের জন্য। যেদিন টাকা উত্তোলন করা হবে সেই দিনের তারিখ উল্লেখ থাকবে সেই ফাঁকা বক্সে।
তবে হ্যাঁ যদি কোন চেক আগে থেকে লেখা হয়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে সেখানে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে যেকোনো একটি তারিখ লিখে দিতে পারবেন। আর যদি সেই সময় অতিবাহিত হয় তাহলে সেই চেকটি বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ পুনরায় আপনাকে সেই চেক দেখতে হবে। আর তবেই সেটা কাজে আসবে।
দ্বিতীয়ত: যে বা যারা টাকা উত্তোলন করবে অথবা যার একাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হবে সেই গ্রাহক বা কোম্পানির নাম উল্লেখ করতে হবে দ্বিতীয় স্টেপে। এক্ষেত্রে যদি সেই ব্যক্তি বা সেই কোম্পানি নিজেই টাকা উত্তোলন করতে চায় তাহলে সেল্ফ লিখে দিতে হবে অপশনে গিয়ে। আর যদি একাউন্ট এ সেই ব্যাক্তি ছাড়াও অন্য কারোর নাম লেখা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে Bearer লেখাটি কেটে দিতে হবে।
পরবর্তি স্টেপে গিয়ে অ্যামাউন্ট লিখতে হবে। যে পরিমাণ টাকা স্থানান্তর করা হয় তা কথায় লিখতে হবে। যেমন ধরুন: দুই হাজার টাকা তুলতে চাই। তাহলে সেখানে লিখতে হবে টু থাউজেন টাকা অনলি আবার বাংলায় দুই হাজার টাকা মাত্র। এক কথায় যে পরিমাণ টাকা উঠানো হবে দ্বিতীয় স্টেপে গিয়ে সেটাই লিখতে হবে।
তৃতীয়ত: বামপাশে যে পরিমাণ টাকা উত্তোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল তাই এই বক্সের মধ্যে অঙ্কে লিখতে হবে। যেমন: কোন ব্যক্তি যদি দুই হাজার টাকা উত্তোলন করতে চায় তবে তাকে এই বক্সে লিখতে হবে ইংরেজিতে 2000 এবং বাংলায় লিখতে হবে দুই হাজার।
চতুর্থত: এবার নিচের দিকে ডান পাশে সিগনেচার দেওয়ার অপশনে সিগনেচার অর্থাৎ স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে। সবশেষ প্রক্রিয়ায় চেকের পেছনের পৃষ্ঠায় “ইন্ডোর্স হেয়ার” লেখাটির ঠিক নিচে দুটি সিগনেচার দিতে হবে।ব্যাস হয়ে গেল আপনার সঠিক প্রক্রিয়ায় চেক লেখা।
চেকের প্রধান অংশ সমূহ কি কি
চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জেনেছি কিন্তু এর সাথে আরও জানা প্রয়োজন একটি চেকের প্রধান অংশ গুলো কি কি? তাহলে চলুন আর্টিকেলের এ পর্যায়ে জেনে নেই কি কি অংশ থাকবে একটি চেক এ।
নাম্বার ১. ব্যাংক এন্ড ব্রাঞ্চ নেম
নাম্বার ২. চেক নাম্বার
নাম্বার ৩. পে টু
নাম্বার ৪. That some of taka
নাম্বার ৫. টাকা
নাম্বার ৬. অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ইনফরমেশন
নাম্বার ৭. সিগনেচার লাইন
নাম্বার ৮. ম্যাগনেটিক লিংক ক্যারেক্টার রিকগনিশন।
চেক লেখার সতর্কতা চেক লেখার সময় অবশ্যই যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন
- পে টু অংশে গ্রাহক বা কোম্পানির নাম লেখার পরবর্তীতে ফাঁকা জায়গা থাকলে সেখানে একটি লম্বা টেনে দিতে হবে। কারণ দুর্ঘটনাবশত যদি আপনার চেক হারিয়ে যায় তাহলে অন্য কোন নাম সেখানে বসিয়ে ফেলতে পারবে না কেউ।
- অবশ্যই টাকার পরিমান লেখার পর / চিহ্নটি দিতে হবে। এর সুবিধা হল অন্য কেউ নিজের ইচ্ছে মত টাকার অ্যামাউন্ট বাড়িয়ে নিতে পারবে না যদি এই চিহ্নটি দেওয়া হয়ে থাকে।
- সিগনেচারের জায়গায় ব্যাংক সিগনেচার দিতে হবে। মানে ব্যাংক স্বীকৃত সিগনেচার। আর তা যদি না হয় তাহলে চেকটি গ্রহণযোগ্য হবে না।
- অবশ্যই যেকোনো চেক লেখার সময় ভাষার দিকে নজর দিতে হবে। একটি চেকে দুই রকমের ভাষা থাকবে না। তাই আপনি যদি ইংলিশে লিখতে চান তাহলে ইংলিশে লিখতে হবে আর বাংলায় লিখতে চাইলে বাংলাতেই লিখতে হবে। এক কথায় ভাষার গুরুচণ্ডালী করা যাবে না।
- অবশ্যই কাটাকুটি করার বাজে অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে সেইসাথে ওভাররাইট করা যাবে না।
পরিশেষে: সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা এই ছিল আমাদের আজকের চেক লেখার নিয়ম এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় যেকোনো ব্যাংকের চেক লেখার সঠিক নিয়মাবলী। তো যদি কোন মতামত থেকে থাকে কমেন্ট করে জানান সেই সাথে সতর্কতা অবলম্বন করে চেক এর সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে তা ব্যবহার করুন।
এতে করে কোন জালিয়াতের সম্ভাবনা থাকবে না। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন পরবর্তীতে আবারো নতুন আলোচনা পর্বে দেখা হবে। সবাইকে আল্লাহাফেজ।