বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম | জেনে নিন ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট ক্রিয়েট করার সঠিক পদ্ধতি
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম | জেনে নিন ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট ক্রিয়েট করার সঠিক পদ্ধতি: আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, আজকের আর্টিকালে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব বিকাশ একাউন্ট খোলার সবচেয়ে সহজ নিয়ম সম্পর্কে। দেখুন এটা আমরা সবাই জানি, মোবাইল ব্যাংকিং এর বদৌলতে জনপ্রিয়তার শীর্ষ অবস্থান করছে বিকাশ। আর এর পাশাপাশি তাল মিলিয়ে চলেছে নগদ।
গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, বিকাশের গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেশি। এর মতো কারণ বিশ্বস্ততা এবং সঠিক সেবা প্রদান। আমাদের প্রয়োজনে প্রযুক্তির উন্নয়নে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রয়োজন পরে বিকাশ একাউন্ট খোলার। কেননা অর্থ লেনদেনের জন্য এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। তাই যে বা যারা বিকাশ একাউন্ট খুলতে সমস্যায় পড়েন, তাদেরকে বলব এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন করুন। তাহলে আসুন শুরু করা যাক।
বিকাশ কি?
বিকাশ হল ব্রাক ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের অন্তর্গত ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স কর্পোরেশন বিল এন্ড ম্যারিনডো গেটস ফাউন্ডেশন এবং এন্ড ফিনান্সিয়াল এর যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালের ২১ জুলাই রবি আজিয়াটা লিমিটেডকে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর সহযোগী হিসেবে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদানের কার্যক্রম শুরু করে। আর আজকের সময় দাঁড়িয়ে সেটিই হচ্ছে, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল ফোন ভিত্তিক টাকা স্থানান্তরকারি প্রতিষ্ঠান।
বিকাশ একাউন্ট কি?
বিকাশ বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। আর এই বিকাশের মাধ্যমে একজন গ্রাহক বা ইউজারস কিছু ইনফর্মেশন প্রদান করার মাধ্যমে একাউন্ট ক্রিয়েট করতে পারে এবং নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য গ্রাহকের একাউন্টে খুব সহজেই অর্থ লেনদেন করতে পারে। শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং। সুতরাং বিকাশ একাউন্ট হলো বিকাশ গ্রাহকদের ইউজারদের অ্যাকাউন্ট, যেটা তারা তাদের প্রয়োজনে এবং বিকাশের দেওয়া সেবাগুলো গ্রহণের জন্য খুলে থাকে।
একটা বিষয়ে যদি আপনি ভাবেন তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, এমন একটা সময় ছিল যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানের টাকা পাঠানো টা অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে উঠতো আর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পাঠানো কখনোই সম্ভব হতো না। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। কেননা একটা মানুষ তার হাতে থাকে স্মার্টফোন ব্যবহার করে যে কোন কাজ করতে পারে।
কোটি টাকাও ঘরে বসে একজনকে পাঠিয়ে দিতে পারে মানুষ। আর এমন সুযোগ প্রদান করে থাকে বাংলাদেশ মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা গুলো। বাংলাদেশের মূলত বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা রয়েছে তবে এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বিকাশ।
বিকাশে কি কি অ্যাকাউন্ট খোলা যায়?
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম জানার পূর্বে সবার এটা জানা প্রয়োজন যে, বিকাশে একজন গ্রাহক কয় ধরনের অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করতে পারবেন? অর্থাৎ আপনি যদি একাউন্ট খুলতে চান তাহলে বিকাশে আপনি কি কি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। মূলত বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবায় তিন ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেগুলো হলো:
- বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট
- বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট
- বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট
বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট
আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগত কিছু কাজ করার জন্য বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খুলতে পারে। আর এটা খুবই সহজ। সত্যি বলতে বিদেশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আপনার কোথাও যাবার প্রয়োজন পড়বে না। কাছে যদি একটা স্মার্ট ফোন থাকে তাহলে আপনি ঘরে বসে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে আপনার রবি এয়ারটেল টেলিটক এটা দিয়ে যে কোন নাম্বার থেকে একটি বিকাশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন।
বিকাশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি –ভিজিট করুন এই লিংকে.
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট
বিকাশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট ছাড়া বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা গুলো গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বিকাশ মার্জেন্ট সেবা প্রদান করে থাকে। আর তাই আপনি যদি বিকাশে একটা পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট এর চেয়ে আরো অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে চান তাহলে খুলে ফেলতে পারেন বিকাশ মার্জেন্ট একাউন্ট, যেটা আপনার ব্যবসা কে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং আপনি রেফারেন্সের মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার পদ্ধতি –-ভিজিট করুন এই লিংকে
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর মত ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আলাদা আয় করার জন্য আরেকটি একাউন্ট হচ্ছে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট। তাই আপনি যদি চান বিকাশ থেকে এক্সটা কোন ইনকাম করতে তাহলে আপনার জন্য এই অ্যাকাউন্ট অনেক বেশি কার্যকরী। তাই আপনি আপনার পছন্দসই ও সুবিধামতো যেকোনো একটি অ্যাকাউন্ট বা সবগুলো একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন আলাদা আলাদা পদ্ধতি অনুসরণ করে।
বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য কি কি প্রয়োজন
যেহেতু আপনি কোন মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা থেকে সেবা গ্রহণের উদ্দেশ্যে নিজস্ব একাউন্ট খুলছেন, তাই অবশ্যই আপনাকে বেশ কিছু ইনফরমেশন প্রদান করতে হবে। তাই এ পর্যায়ে আমরা জানবো বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য আপনার কি কি প্রয়োজন হতে পারে সে সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা যদি বিকাশ একাউন্টের তিনটি অ্যাকাউন্টটি খুলতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার বেশ কিছু ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন পড়বে। সেগুলো হচ্ছে:
- একটি অ্যাক্টিভ মোবাইল নাম্বার
- ইন্টারনেট কানেকশন
- স্মার্ট ফোন
- এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয় পত্র অর্থাৎ স্মার্ট কার্ড
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- পাসপোর্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট
বিশেষ দ্রষ্টব্য: স্মার্ট ফোন ছাড়াও আপনি বাটন ফোন ব্যবহার করেও বিকাশে নিজস্ব একাউন্ট খুলতে পারবেন।
বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি
অনেকের প্রশ্ন, কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে বিকাশে একাউন্ট খোলা যায়। সত্যি বলতে বিকাশে যদি আপনি একাউন্ট খুলতে চান তাহলে চারটি নিয়ম বা পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারবেন। সেগুলো হচ্ছে:
- বিকাশ মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে
- বিকাশ এজেন্ট এর মাধ্যমে
- ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন পয়েন্ট এর মাধ্যমে
- বিকাশ গ্রাহক কেন্দ্রে অবস্থান করে।
বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ অ্যাকাউন্ট কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করে খোলা যাবে এবং একাউন্ট খোলার সময় কি কি ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন পড়বে, কয় ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন ইত্যাদি বিষয়ে ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি। এখন জানবো বিকাশ একাউন্ট খোলার সময় আপনি কোন কোন স্টেপ গুলো ভালো করবেন।
ঘরে বসে বিকাশ অ্যাপ দিয়ে একাউন্ট খুলুন
প্রথমত: আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনে নেটওয়ার্ক কানেকশন অন করুন।
দ্বিতীয়তঃ প্লে স্টোরে গিয়ে বিকাশ অ্যাপ ইন্সটল করুন
তৃতীয়তঃ বিকাশ অ্যাপ্লিকেশনটি ইন্সটল এর পরবর্তীতে আপনার মোবাইলে সেটা ওপেন করুন।
চতুর্থত: লগইন বা রেজিস্ট্রেশনের জন্য ট্রাপ করুন।
পঞ্চমত: আপনার নির্ধারিত নাম্বারে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে সেই নাম্বারটি সঠিকভাবে বসিয়ে দিন। পরবর্তীতে সিলেক্ট করুন আপনি কোন মোবাইল অপারেটরের সিম ব্যবহার করছেন অর্থাৎ রবি, গ্রামীন, এয়ারটেল নাকি অন্য কিছু।
ষষ্ঠমত: আপনার মোবাইলে আসা ৬ ডিজিটের ওটিপি সঠিকভাবে বসিয়ে সাবমিট করুন। আর ভালোভাবে পড়ে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যান।
সপ্তমত: আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সামনের ও পেছনের অংশের ছবি ভালোভাবে তুলে সাবমিট করুন।
অষ্টমত: নাম ঠিকানা বা অন্যান্য তথ্য ভুল থাকলে তার সংশোধন করুন।
নবমত: আপনার নিজের ছবি বা সেলফি তুলে সাবমিট করুন। অবশ্যই ছবি তোলার সময় ডানে বামে তাকাবেন আর চোখ লাফাবেন। কেননা আপনি যদি দুই থেকে তিনবার দ্রুত চোখ খোলা বা বন্ধ করেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ছবিটি স্ক্যান করে নেওয়া হবে।
দশমত: রেজিস্ট্রেশন এর তথ্য যাচাই-বাছাই করে সাবমিট করুন। এরপর যখন আপনার ফোনে এসএমএস আসবে সেটা দেখে পরবর্তীতে আপনার বিকাশ অ্যাপ এ লগইন করুন।
ব্যাস এটুকুই, হয়ে যাবে আপনার নিজস্ব বিকাশ একাউন্ট।
বিকাশ একাউন্ট পাসওয়ার্ড সেট করার নিয়ম
এটা আমরা সবাই জানি যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবায় আমরা যে বা যে কয়েকটি একাউন্ট ক্রিয়েট করে থাকি সেগুলোতে একটি গোপন পিন নাম্বার থাকে। যেটা একান্তই নিজের। কিন্তু কথা হচ্ছে বিকাশ একাউন্ট খোলার সময় সেই ০৫ ডিজিটের পিন নাম্বারটি কিভাবে সেটআপ করতে হয়। আসুন এ পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে বিকাশ একাউন্ট পাসওয়ার্ড সেট করার নিয়ম জেনে নেই।
প্রথমত: আপনার ফোনে কনফার্মেশন মেসেজ আসার পর বিকাশ অ্যাপ ওপেন করুন
দ্বিতীয়তঃ আপনার বিকাশ একাউন্টের নাম্বারটি সাবমিট করুন।
তৃতীয়ত: মোবাইল সিম অপারেটর সিলেক্ট করুন অর্থাৎ গ্রামীন, বাংলালিংক নাকি রবি, এয়ারটেল।
চতুর্থত: আপনার মোবাইলে আসার ৬ ডিজিটের ও টিপি লিখে সাবমিট করুন।
পঞ্চমত: পাঁচ ডিজিটের একটি গোপন পিন নাম্বার সেটাপ করুন এবং পুনরায় সেটা লিখে কনফার্ম করুন।
ব্যাস হয়ে যাবে আপনার বিকাশ একাউন্টে পিন নাম্বার সেটআপ।
বিকাশের সুবিধা সমূহ
এ পর্যায়ে আমরা জানবো বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা থেকে আপনি সেবা হিসেবে কি কি পাবেন। চলুন এ পর্যায়ে জেনে আসি বিকাশের সুবিধা সমূহের কথা।
- বিকাশের ফলে মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে আপনি টাকা লেনদেন করতে পারবেন
- যেকোন স্থানে অবস্থান করে আপনার ইন্টারনেট বিল, মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি সকল ধরনের বিল পরিশোধ করতে পারবেন
- ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন
- ব্যাংকের থেকে টাকা বিকাশ একাউন্টে ঘরে বসে ট্রান্সফার করতে পারবেন
- বিকাশ এসএমই উদ্যোক্তাদের লোন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
পরিশেষে: তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি খুব সহজেই বিকাশে নিজেদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে ফেলতে পারবেন। তো যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে বা অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করার ক্ষেত্রে কোন সমস্যায় পড়েন আমাদের কমেন্ট করে জানান। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।